পাঁচটি সামষ্টিক অর্থনীতির চলকের নাম লিখ ও ব্যাখ্যা কর।
সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণে যেসব অর্থনৈতিক চলক ব্যবহৃত হয় তাদেরকে সামষ্টিক চলক বলা হয়। এদের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি চলকের ধারণা থাকা অর্থনীতির সকল শ্রেণির পাঠকের জন্য খুব জরুরি। নিম়নে পাঁচটি সামষ্টিক চলকের ধারণা দেওয়া হলাে-
১. জাতীয় আয় : সাধারণত কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে (১বছরে) দেশের সকল মানুষ অর্থনৈতিক কর্মে লিপ্ত থেকে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তার আর্থিক মূল্যকে জাতীয় আয় বা সংক্ষেপে জিএনপি বলে। জাতীয় আয়কে আবার মাথাপিছু জাতীয় আয় বা আয়ন্তর হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।তাই সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণে আয় বলতে জাতীয় আয় কিংবা আয়ন্তর বুঝতে হবে।
২. ভােগ : মানুষ বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ব্যবহার করে যে অর্থনীতিতেও ব্যবহৃত (ব্যষ্টিক চলক হিসেবে) হয়। তবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভােগ ধারণাটি দেশের সকল মানুষের ভােগ কর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে ভােগ ব্যয় বলতে সরকারি,বেসরকারি ও বিদেশি নাগরিক সকলের ভােগ ব্যয়ের সমষ্টিকে তথা ভােগ প্রবণতাকে (Propensity to Consume) বুঝায়।
৩. সঞ্চয় : আয় থেকে ভােগ ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে সঞ্চয় বলে। এ চলকটিও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে ব্যবহৃত হয় তবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সঞ্চয় বলতে দেশের সকল মানুষের(সরকারি + বেসরকারি + বিদেশি) মােট সঞ্চয়কে বুঝায়।
৪. মূলধন গঠন : মূলধন বলতে উৎপাদন ও বিনিয়ােগে নিয়ােজিত ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি, কল-কারখানা ইত্যাদি উপকরণকে বুঝায়- যা অধিক উৎপাদনে সহায়তা করে। আবার সঞ্চিত অর্থকে ব্যবহার উপযােগী মূলধনে রূপান্তরিত করাকে মুলধন গঠন বলা হয়। সামষ্টিক অর্থনীততৈ মূলধন বলতে সমগ্র দেশের মূলধন এবং মূলধন গঠন বলতে সমগ্র দেশের (সরকারি,বেসরকারি ও বিদেশি) মূলধন গঠনকে বুঝায়।
৫. বিনিয়ােগ : সহজ অর্থে বিনিয়ােগ বলতে উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন মূলধনসামগ্রী নিয়ােগ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ নতুন কলকারখানা স্থাপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ, যন্ত্রপাতি সংযােজন প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণের ফলে অর্থনীতিতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়লে তাকে বিনিয়ােগ বলা হয়। বিনিয়ােগ ধারণাটি সামষ্টিক অর্থনীতিতে বহুল ব্যবহৃত একটি চলক। অবশ্য ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে এর ব্যবহার আছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিনিয়ােগ ধারণাটি দেশের সকল ক্ষেত্রের বিনিয়ােগ ব্যয়কে (সরকারি + বেসরকারি + বিদেশি) তথা বিনিয়ােগ প্রবাহকে (Investment flow) বুঝায়।